Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

কৃষিতে নবান্ন

কৃষিকে ঘিরেই মানব সভ্যতার জাগরণ শুরু। বলা হয়ে থাকে কৃষিই কৃষ্টির মূল। কেননা কৃষি বাংলাদেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশে আছে। বাংলাদেশ ধানের দেশ-গানের দেশ-পাখির দেশ। তাই অগ্রহায়ণে ধান কাটার উৎসব গ্রামবাংলা তথা বাঙালির প্রাচীন ঐতিহ্য। পহেলা  অগ্রহায়ণ মানেই ছিল বাঙালি গেরস্থ বাড়িতে উৎসবের আমেজ। নতুন ধানের গন্ধে ম ম উঠান বাড়ি। আবহমান এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে পহেলা অগ্রহায়ণ দিনটি নবান্ন উৎসব হিসেবে পালন করে আসছে এদেশের কৃষিতান্ত্রিক পরিবারগুলো। নবান্ন উৎসব এমন একটি আয়োজন যাতে দেশের শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষের সম্পৃক্ততা রয়েছে।


নবান্ন ঋতুকেন্দ্রিক একটি উৎসব। শাব্দিক অর্থের দিকে বলতে পারি, ‘নবান্ন’ শব্দের অর্থ ‘নতুন অন্ন’। হেমন্তে নতুন ফসল ঘরে তোলার সময় এই উৎসব পালন করা হয়। এই উৎসব পালিত হয় অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম দিন। অগ্র অর্থ ‘প্রথম’। আর ‘হায়ণ’ অর্থ ‘মাস’। এ থেকে সহজেই ধারণা করা হয়, একসময় অগ্রহায়ণ মাসই ছিল বাংলা বছরের প্রথম মাস। হাজার বছরের পুরোনো এই উৎসব সবচেয়ে অসা¤প্রদায়িক, সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী এবং সবচেয়ে প্রাচীনতম মাটির সঙ্গে চিরবন্ধনযুক্ত।


বাংলাদেশে নবান্ন উৎসব পালিত হয় আমন ধানের ফলন ঘরে তোলাকে কেন্দ্র করে। আমন শব্দটির উৎপত্তি আরবি শব্দ ‘আমান’ থেকে যার অর্থ আমানত। অর্থাৎ আমন কৃষকের কাছে একটি নিশ্চিত ফসল (ঝঁৎব ঈৎড়ঢ়) বা আমানত হিসেবে    পরিচিত ছিল। আবহমান কাল থেকে এ ধানেই কৃষকের গোলা ভরে যা দিয়ে কৃষক তার পরিবারের ভরণ-পোষণ, পিঠাপুলি, আতিথেয়তাসহ সংসারের অন্যান্য খরচ মিটাতো। এজন্যই হয়তো এই মৌসুমকে কেন্দ্র করে পালিত হয় নবান্ন উৎসব। ফলন ও উৎপাদনে বোরোর চেয়ে আমনের অবস্থান অনেক পেছনে হওয়া সত্তে¡ও প্রতি বছর দেশে আমনের উৎপাদন বাড়ছে। গত বছর আমনের উৎপাদন ১ কোটি ৪০ লক্ষ টনে পৌঁছায় যা মোট উৎপাদনের ৩০ শতাংশ। এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রেখেছে ব্রি উদ্ভাবিত নতুন নতুন জাত-প্রযুক্তি, আধুনিক ব্যবস্থাপনা ও সঠিক নীতি প্রয়োগ।


বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমন মৌসুম ও এর পরিবেশ উপযোগী ৪১টি (৩৯টি ইনব্রিড ও ২টি হাইব্রিড) উফশী ধানের জাত ও ধান উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নানা রকম কৃষিতাত্তি¡ক ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবন করেছে। অনুক‚ল পরিবেশ উপযোগী জাতসমূহ হচ্ছে- বিআর৪, বিআর৫, বিআর১০, বিআর১১, ব্রি ধান৩০, ব্রি ধান৩২, ব্রি ধান৩৩, ব্রি ধান৩৪, ব্রি ধান৩৯, ব্রি ধান৪৯, ব্রি ধান৬২, ব্রি ধান৭৯,   ব্রি ধান৭১, ব্রি ধান৭২, ব্রি ধান৭৫, ব্রি ধান৮০, ব্রি ধান৮৭।
প্রতিক‚ল পরিবেশে চাষযোগ্য জাতগুলো হলো-
খরাপ্রবণ এলাকায় ব্রি ধান৫৬, ব্রি ধান৫৭ ও ব্রি ধান৬৬,  ব্রি ধান৭১ বন্যাপ্রবণ এলাকার জন্য উপযোগী জাতগুলো হলো- ব্রি ধান৫১, ব্রি ধান৫২,  ব্রি ধান৭৯। এছাড়া বিআর২২, বিআর২৩, ব্রি ধান৪৬ জাতগুলোর নাবি গুণ থাকার জন্য এদের বীজ  ২০-৩০ শ্রাবণে বপন করে  ৩০-৪০ দিনের চারা সর্বশেষ ৩১ ভাদ্র পর্যন্ত বন্যাপ্রবণ এলাকায় রোপণ করা যায়।
লবণাক্ত এলাকায় বিআর২৩, ব্রি ধান৪০, ব্রি ধান৪১, ব্রি ধান৫৩, ব্রি ধান৫৪, ব্রি ধান৭৩, ব্রি ধান৭৮ জোয়ার-    ভাটাপ্রবণ অলবণাক্ত এলাকার উপযোগী জাতগুলো হলো-    ব্রি ধান৪৪, ব্রি ধান৫২, ব্রি ধান৭৬,ব্রি ধান৭৭ জলাবদ্ধ এলাকায় হয় এমন এলাকার জন্য উপযোগী জাত- বিআর১০, বিআর২৩, ব্রি ধান৩০, ব্রি ধান৭৯, ব্রি ধান৭৬, ব্রি ধান৭৮ বরেন্দ্র এলাকার জন্য জাতগুলো হলো- ব্রি ধান৫৬, ব্রি ধান৫৭, ব্রি ধান৬৬, ব্রি ধান৭১, ব্রি ধান৭৫, ও ব্রি ধান৮০। এছাড়া সুগন্ধি ব্রি ধান৩৪সহ সমতল বরেন্দ্র অঞ্চলে অনুক‚ল পরিবেশের  জন্য সুপারিশকৃত সব জাতই চাষ করা সম্ভব।
পাহাড়ি এলাকার জন্য উপযোগী জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে-  ব্রি ধান৪৯, ব্রি ধান৭০, ব্রি ধান৭১, ব্রি ধান৭৫, এবং            ব্রি ধান৮০।
প্রিমিয়াম কোয়ালিটি আমনের জাত : দিনাজপুর, নওগাঁসহ যেসব এলাকায় সরু বা সুগন্ধি ধানের চাষ হয় সেখানে বিআর৫, ব্রি ধান৩৪, ব্রি ধান৩৭, ব্রি ধান৩৮, ব্রি ধান৭০,      ব্রি ধান৭৫ ও ব্রি ধান৮০ চাষ করা যায়।
ব্রি উদ্ভাবিত হাইব্রিড জাত : আমন মৌসুমের জন্য ব্রি উদ্ভাবিত জাতগুলো হলো ব্রি হাইব্রিড ধান৪ ও ৬। এ জাতগুলো বন্যামুক্ত এলাকায় রোপা আমনে অনুক‚ল পরিবেশে চাষযোগ্য। এ জাতগুলোর চাল মাঝারি চিকন, স্বচ্ছ ও সাদা এবং লম্বা, ভাত ঝরঝরে হওয়ায় কৃষকের কাছে পছন্দনীয়।
নতুন উদ্ভাবিত আমনের জাত ব্রি ধান৭১, ব্রি ধান৭২, ব্রি ধান৭৫, ব্রি ধান৭৯, ব্রি ধান৮০ এবং ব্রি ধান৮৭ জাতগুলো চাষ করে প্রতিনিয়ত উৎপাদন বৃদ্ধি মাধ্যমে কৃষকের নবান্ন উৎসবে বাড়তি আনন্দ যোগ করা সম্ভব।

গল্প কবিতায় নবান্ন এসেছে অন্যভাবে। কবি জীবনান্দ তার কবিতায় লিখেছেন- ‘অশ্বত্থ পড়ে আছে ঘাসের ভিতরে/ শুকনো মিয়ানো ছেঁড়া, অঘ্রান এসেছে আজ পৃথিবীর বনে/ সে সবের ঢের আগে আমাদের দুজনের মনে/ হেমন্ত এসেছে তবু;’ (অঘ্রাণ প্রান্তর, বনলতা সেন)। অগ্রহায়ণ মানেই ‘আমন’ ধান কাটার মাস। ‘ বাংলার শস্যহীন প্রান্তরে’ যখন ‘গভীর অঘ্রান’ এসে দাঁড়ায়, তখন উৎসবের রঙ ছড়িয়ে পড়ে বাংলার  আকাশ-অন্তরীক্ষে। ধানকাটার রোমাঞ্চকর দিনগুলো বেশ উপভোগ্য হয়ে ওঠে। কিষান-কিষানির প্রাণমন ভরে ওঠে এক অলৌকিক আনন্দে। সোনালি ধানের প্রাচুর্য আর বাঙালি সংস্কৃতির বিশেষ অংশ প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতায় বারবার ধরা পড়েছে দারুণভাবে। তিনি লিখেছেন, ‘চারিদিকে নুয়ে পড়ে ফলেছে ফসল/ তাদের স্তনের থেকে ফোঁটা ফোঁটা পড়িতেছে শিশিরের জল/ প্রচুর শস্যের গন্ধ থেকে-থেকে আসিতেছে ভেসে/ পেঁচা আর ইঁদুরের ঘ্রাণে ভরা আমাদের ভাড়ারের দেশে।’ পুনর্বার ফিরে আসার আকুতি ধ্বনিত হয়েছে জীবনানন্দ দাশের আরেকটি কবিতায়, ‘আবার আসিব ফিরে ধান সিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়/ হয়তো মানুষ নয় হয়তো শঙ্খচিল শালিখের বেশে;/ হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে’। নবান্নে প্রকৃতির বিচিত্র রূপের বর্ণনা দিয়েছেন এ দেশের কবি-সাহিত্যিকরা।


কিষান-কিষানিরা নবান্নের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে নবান্নে বাড়ির জামাইকে নিমন্ত্রণ করা হয়। মেয়েকেও বাপের বাড়িতে ‘নাইয়র’ আনা হয়। নবান্ন আর পিঠেপুলির উৎসবের আনন্দে মাতোয়ারা হয় সবাই। তাই অগ্রহায়ণ এলেই সর্বত্র ধ্বনিত হয়, ‘আজ নতুন ধানে হবে রে নবান্ন সবার ঘরে ঘরে।’ কুয়াশায় আচ্ছন্ন চারদিক আর কৃষকের গোলায় উঠছে পাকা ধান। চিরায়ত বাংলার চিরচেনা রূপ এটি। কৃষকের মাঠে তখন সোনারঙা ধানের ছড়াছড়ি। কৃষক রাশি রাশি সোনার ধান কেটে নিয়ে আসে ঘরে। ধান ভাঙার গান ভেসে বেড়ায় বাতাসে, ঢেঁকির তালে মুখর হয় বাড়ির আঙিনা। নতুন চালের ভাত আর নানা ব্যঞ্জনে সৃষ্টি হয় আনন্দঘন পরিবেশে। তৈরি হয় নতুন চালের পিঠা, ক্ষীর-পায়েস। মুসলিম সমাজে মসজিদে শিন্নি দেওয়ার রেওয়াজও আছে, সনাতন সমাজের কৃষকের ঘরে ঘরে চলে পূজার আয়োজন।


নগরও নবান্ন উৎসব উদযাপনে পিছিয়ে নেই আর। ‘এসো মিলি সবে নবান্নের উৎসবে’ এই সেøাগান সামনে রেখে প্রতিবছর নগরে নবান্ন উৎসব পালিত হয়েছে। এই সময়ে      কৃষকের ঘরে নতুন ফসল আসে, সোনালি ফসলে ভরে ওঠে কৃষকের গোলা। ঘরে থাকে খুশির আমেজ, আর সেই খুশির বহিঃপ্রকাশ ঘটে নবান্ন উৎসবের মাধ্যমে। রাজধানীর শাহবাগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ও বকুলতলায় প্রতি বছর নবান্ন উৎসব উদ্যাপিত হয়। উৎসবে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি, বাউলগান, আদিবাসীদের পরিবেশনা ও নবান্ন কথনসহ ঐতিহ্যবাহী নানা রকম পিঠা প্রদর্শনী করা হয়ে থাকে। বলতে গেলে অগ্রহায়ণের প্রথম সকালে নবান্ন উৎসবে মেতে ওঠে রাজধানীবাসী। নানা শিল্পীদের কণ্ঠে আনন্দে মাতিয়ে তুলে রমনা বটমূল কিংবা চারুকলা প্রাঙ্গণ।


নবান্ন উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় আয়োজন হলো নবান্নের প্রাণ গ্রামীণ মেলা। হরেক রকমের দোকান নিয়ে বসে গ্রামীণ মেলায়। এই মেলায় পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের পিঠা-ফুলি, মিষ্টি-সন্দেশ, মন্ডা-মিঠাই, খেলনা-পুতুল, মাটির তৈজষপত্র। আর বাড়তি আনন্দ দিতে বসে বাউল গানের আসর। নবান্ন উৎসবকে ঘিরে নাচে-গানে মুখরিত থাকে মেলাপ্রাঙ্গণ। প্রকৃতি আর পরিবেশের মধ্যে আত্মহারা হয়ে ওঠে বাঙালি মানুষ।


নবান্নের ফসল আমন কাটা ও ঘরে তোলার আনন্দের পাশাপাশি ধান সংরক্ষণের বিষয়টি উঠে আসে। ঠিকমতো আমন সংরক্ষণ করা না গেলে কৃষক পরিবারের নবান্নের আনন্দ ফিকে হয়ে যেতে পারে। আমনের মাঠে শতকরা ৮০ ভাগ পেকে গেলে ফসল কেটে মাঠে বা উঠানে এনে মাড়াই করতে হবে। দ্রæত ও লাভজনক মাড়াইয়ের কৌশল হিসেবে ব্রি উদ্ভাবিত মাড়াই যন্ত্র যেমন- রিপার, হেড ফিড কম্ভাইন হার্ভেস্টার ও মিনি  কম্বাইন হার্ভেস্টার ব্যবহার করা যেতে পারে। ধান মাড়াই করার জন্য অবশ্যই পরিচ্ছন্ন জায়গা বেছে নিতে হবে। কাঁচা খলায় সরাসরি ধান মাড়াই করার সময় চাটাই, চট বা পলিথিন বিছিয়ে নেয়া উচিত। এভাবে ধান মাড়াই করলে ধানের রঙ উজ্জ্বল ও পরিষ্কার থাকে। মাড়াই করার পর অন্তত ৪-৫ বার রোদে ভালোভাবে শুকানোর পর ঝেড়ে নিয়ে গোলাজাত বা সংরক্ষণ করতে হবে।


শেষ করছি আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের কৃষকের স্বার্থরক্ষার একটি আকুতির কথা উল্লেখ করে। তিনি মেহনতি মানুষের স্বার্থরক্ষায় সমস্যা জর্জরিত কৃষকের পক্ষে যে দাবিগুলো পেশ করেছিলেন, তার ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে। কৃষক যাতে তার উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য ও উপযুক্ত মুনাফা পায়, নিজের জমিতে যেন তার কায়েমি স্বত্ব বজায় থাকে এবং কৃষি-জমি থেকে তাকে যেন উচ্ছেদ করা না হয়  এ দাবিগুলো জাতীয় কবি নজরুলের। আজকের দিনেও শুধু কৃষক নয়, গোটা জাতির কাছে দাবিগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নবান্ন উৎসবে বাঙালি জনজীবনে অনাবিল আনন্দ, সুখ ও সমৃদ্ধি বয়ে আনুক। সব ক্ষেত্রে এদেশের খেটে খাওয়া কৃষকের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত হোক এই কামনায় শেষ করছি।

 

কৃষিবিদ এম. আব্দুল মোমিন

ঊর্ধ্বতন যোগাযোগ কর্মকর্তা, ব্রি, গাজীপুর-১৭০১, মোবা : ০১৭১৬৫৪০৩৮০, ই-মেইল : Smmomir80@gmail.com

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon